টাকা উপার্জন করতে মানুষ হত্যা করে লাশ বিক্রি
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসা ও মৃত দেহ বিক্রি প্রায়সই খবরের শিরোনাম হয়। কবর থেকে লাশ চুরি, মর্গ থেকে লাশ উধাও। বেশিরভাগ লাশ চুরি হত বিক্রির উদ্দেশ্যে। তবে এটা নতুন কিছু নয়। তবে ১৮৫৭ সাল ইংল্যান্ডের দুই বন্ধু যারা জীবিত মানুষ হত্যা করে তাদের লাশ বিক্রি করতো যাদের নাম মার্ক এবং হেয়ার। কিভাবে এই দুই বন্ধু এমন লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তা জানলে যে কারো গা শিউরে উঠবে।
১৮৫৭ সালে নভেম্বর শ্রমিক থেকে বাড়িওয়ালা হয়ে ওঠা উইলিয়াম হেয়ারের ভাড়াটিয়া ডোনাল্ড চার পাউন্ট বাড়ি ভাড়া না দিয়েই মারা যান। নিরুপায় হয়ে দীর্ঘ দিনের সহকর্মী ও বন্ধু উইলিয়াম বার্গকে বেপারটি জানালেন। সব কিছু শুনে বন্ধু হেয়ারকে আজব এক পরামর্শ দিলেন বার্গ। বার্গ হেয়ারকে ডোনাল্ডের মরদেহ বিক্রি করার পরামর্শ দিলো। এরিম্বরা তখন চিকিৎসার তীর্থভূমি। শল্য চিকিৎসকদের গবেষনা ও চিকিৎসাদানের জন্য মরদেহের চাহিদা তখন পুরু ইংল্যান্ড জুড়ে।
আরও পড়ুনঃ ইন্টারপোল কি ও কেনো এতো শক্তিশালী?
ইংল্যান্ডে শীতকাল ছিলো ব্যবচ্ছেদের মৌসুম। শীতকালে মৃতদেহ সহজে সংরক্ষণ করা যেতো। গৃষ্মকালে যেখানে মৃতদেহ বিক্রি হতো ৭ পাউন্ড শীতকালে দাম উঠতো ১০ পাউন্ড। চাহিদা এতোই বেড়ে যেতো যে লাশ চোরদের ভয়ে সমাধীস্থল পাহারা দিতে হতো। এমন অবস্থায় মৃত ডোনাল্ড মূল্যবান হয়ে উঠলো হেয়ারের কাছে। রাতের আধারে এরিম্বরা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছুটে গেলো মার্ক ও হেয়ার। লাশ কিভাবে বিক্রি করতে হয় তা তারা জানতো না। এক ছাত্র তাদের দুইজনকে তার শিক্ষক ডা. নক্সের কাছে নিয়ে গেলো।
নক্স তখন একটি এনাটমি স্কুল চালাতো। মেডিক্যাল ছাত্রদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলো। নক্স ডোনাল্ডের লাশ পরিক্ষা করে বার্গের হাতে ৭ পাউন্ড ধরিয়ে দিলো। তখনকার ৭ পাউন্ডের বর্তমান মূল্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। এতো টাকা একসাথে পেয়ে হেয়ার ও বার্গ অনেক খুশি। টাকা পেয়ে তারা যখন ফিরে যাচ্ছিলো তখন নক্সের এক সহযোগী তাদের আরও লাশ নিয়ে আসার আহবান জানালো।
এই লোভে তারা বেছে নিয়েছে ভয়ংকর পথ। জীবিত মানুষকে হত্যা করে তাদের লাশ বিক্রি করতো। একের পর এক মানুষ হত্যা করে তাদের মৃতদের বিক্রি করতো ডা. নক্সের কাছে। হত্যা করার আগে তারা আগে উইসকি খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতো। শুধু লাশ বিক্রির উদ্দেশ্যে একের পর এক মানুষ হত্যা করতে শুরু করে তারা।হেয়ার ও বার্গ গরীব ও অসহায় মানুষকদের টার্গেট করতো। যারা হারিয়ে গেলে খোজখোজি করা মত কেউ নেই।
কিন্তু এক সময় ভুল করে বসলো দুজন। জেমি উইলসন নামের এক ভিক্ষুককে টার্গেট করলো তারা। এরিম্বরার আসে পাশে জেমি নামের এই ভিক্ষুক ছিলো বেশ পরিচিত। হেয়ার জেমিকে লোভ দেখিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে হত্যা করে। জেমি ভিক্ষুল হলেও তার তিরোধানের কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরু শহরে। ডা. নক্সের হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় বেচে যায় বার্গ ও হেয়ার।
কিন্তু মার্গারেট নামক এক আইরিশ মহিলাকে হত্যা করতে তারা ধিরা পরে যায়। মার্গারেট নিজের জীবন রক্ষা করতে পারেননি। তবে প্রান হারানোর আগ মুহূর্তে তার চিৎকার হেয়ারের বর্ডিং হাউসের ভাড়াটিয়া এন্ড্রি৷ হেয়ারে স্ত্রী এন্ড্রেকে পাশের কক্ষে যেতে নিষেধ করে কৌতূহল বসর এন্ড্রি সেই কক্ষে করে এবং মার্গারেটের লাশ খুজে বের করে। এন্ড্রে সাথে সাথে পুলিশকে জানায় যদিও ততক্ষণে লাশ ডা.নক্সের পৌছে যায়।
দশ মাসে ১৬ জনকে হত্যা করেছিলো এই হেয়ার ও বার্গ। নিক্সের কাছে মরদেহ বিক্রি করে তারা পেয়েছিলো ১১০ পাউন্ড। এই অর্থ তারা মদ পান করে উড়িয়েছিলো। মার্গারেটের মরদেহ কতৃপক্ষের কাছে এলেও সিরিয়াল কিলিং প্রমাণ করতে তা যথেষ্ট ছিলো না।বার্গ ও হেয়ারকে তাদের স্ত্রীসহ আদালতে হাজির করা হয়। বার্গকে মার্গারেট হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও শাস্তি সরুপ প্রায় ২৫ হাজার মানুষের সামনে ফাসিতে ঝুলতে হয়েছিলো উইলিয়াম বার্গকে।
ব্যবচ্ছেদের জন্য মরদেহ যোগার করতে গিয়ে একের পর এক খুন করা বার্গের পরিনতিও হয় একই রকম। তার মরদেহ পাঠানো হয় এরিম্বরা মেডিকেল স্কুলে। এখন পর্যন্ত উইলিয়াম বার্গের কঙ্কাল এরিম্বরা মেডিকেল স্কুলে প্রদর্শনীর জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উইলিয়াম বার্গের কঠোর শাস্তি হলে রেহাই পেয়ে যায় তার দোষর উইলিয়াম হেয়ার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন