নিস্বন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান সাহারা মরুভূমি কয়েককোটি বছর আগে এই মরুভূমির জায়গায় ছিলো টেথিস সাগর। পৃথিবীর মাঝ বরাবর একটা বিশাল অংশ মরুভূমি। চায়নার গোবি মরুভূমি থেকে শুরু করে আমেরিকার চিহুয়াহান মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তীর্ন এ অংশকে বলা হত ডেসার্ট বেল্ট। এই ডেসার্ট বেল্টে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভুমি সাহারা। এটি আয়তনে সমগ্র ভারতের তিন গুন বড়। সাহারা মরুভূমি ১২টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত, দেশগুলু হলো মিশর, মরক্কো, লিবিয়া, মালি, মৌরতানিয়া, আলজেরিয়া, চাঁদ, ইরিক্রিয়া, নাইজার, সুদান, তিউনিশিয়া ও পশ্চিম সাহারা।
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীতে নিষিদ্ধ দেশ কোনটি
পৃথিবীর এই মালুময় উষ্ণতম স্থানে মানুষের জীবন ধারন অসম্ভব বললেই চলে। কিন্তু আসলেইকি সাহারা পৃথিবী সৃষ্টিরশুরু থেকে সাহার মরুভূমি ছিল নাকি সেখানেও গাছপালা নদী নালা ও প্রানীর অস্তিত্বছিলো? আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগেও সাহারা মরুভূমি সবুজে ঘেরা প্রাণ চঞ্চল এক ছিলো। এটা পরিষ্কার যে এক সময় বিশাল এক মানব সভ্যতা সাহারায় ছিলো। তাহলে কিভাবে মরুভুমিতে পরিনত হলো সাহারা? কেউ কেউ বলেন সেখানকার উট আর ভেররা পাল তৃনভূমি সাবার করে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বাস্তব হলো সাহারায় উট এসেছে অঞ্চলটি মরুভূমি হওয়ার পর।
আরও পড়ুনঃ রাসূল (সঃ)-এর মোজেজা সাহাবী গাছ
এক সময় মানব সভ্যতা ছিল মরুভূমির বিভিন্ন স্থানে এর অবশেষ খুজে পাওয়া গেছে আর বালু খনন করে এরনিচে কাদামাটির স্তর পাওয়া গেছে। তারমানে সাহারার মাটি এক সময় উর্বর ছিলো যা বালিতে ঢাকা পরে গেছে। হয়তো পূর্নাঙ্গ শহরও পাওয়া যেতো যা মানুষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। মরুর বালির নিচে শহর এটা কাল্পনিক বা কল্পনা নয়, পুরুনো ম্যাপ ঘটলে দেখা যাবে আধুনিক ম্যাপে যেসকল অঞ্চলকে মরুভূমি হিসেবে দেখানো হয়েছে সেখানে এক কালে মানব বসতি ছিলো। মানুষ সেখানে বাসযোগ্য দূর্গ গড়ে ছিলো। শস্য ক্ষেত ও পশুর খামারে সেসব এলাকা ছিলো প্রাণ চঞ্চল। ষোল শতকে আঁকা তেমনই এক ম্যাপে আফ্রিকাকে অসংখ্য শহর ও নদীময় মহাদেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। মধ্য আফ্রিকায় ঘন বনের দেখাও মেলে ঐ ম্যাপে আর যেখানে মরুভূমি ম্যাপে সেখানে বড় বড় শহরের দেখা মেলে।
আরও পড়ুনঃ ভারত সারা বিশ্ব থেকে সিগারেটের বর্জ্য কিনছে কেনো
ইউরোপীয়দের আঁকা আফ্রিকার এক ম্যাপে দেখা যায় আফ্রিকায় এক সময় অনেক উঁচু উঁচু টাওয়ার ও দূর্গ ছিলো। আলজেরিয়া পাওয়া টিগমান শহরটি হাজার বছরের পুরুনো সেখানে আস্ত এক লাইব্রেরির দেখা মিলেছে। লিবিয়ার দক্ষিন পূর্বে হাজার বছরের বয়সী সাইপ্রাস আর অলিভ গাছের অস্তিত্ব বলে দেয় যে সাহার জুরে এক সময় ছিলো ওখ, ওয়েল নাট লেবু গাছের ঘন ঝোপ। ঘনেই বনে প্রাণিরাতো ছিলই। মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ১৫০ কিলোমিটা দূরে সাহারা মরুভূমির একটি অংশের নাম 'ওয়াদি-আল-হিতান'। আরবি ভাষায় ওয়াদি-আল-হিতান এর অর্থ তিমির উপত্যকা। প্রায় ৩৬ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্ত ডোরাডান প্রাজতির তিমির জীবাস্ব এখানে পাওয়া গেছে। সাহার মরুভূমি যে এক কালে সমূদ্র ছিলো বিজ্ঞানীরা এতাকেই তার বড় প্রমান হিসেবে বিবেচনা করেন। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সিবাস্ব পাওয়া গেছে এখানে।
মরুভূমির বালির নিচে পাওয়া গেছে কুমিরের প্রচুর কঙ্কাল। সাহারায় যে এক সময় নদী আর হ্রদ ছিলো এটিই তার বড় প্রমান। ২০১০ সালে বিজ্ঞানীরা বালি খুঁড়ে সাহারা মরুভূমির তলায় বিশাল সেই প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের হ্রদ খুজে পেয়েছে। হ্রদটির আয়তন ছিলো ৪৫ হাজার বর্গ কিলমিটার। হ্রদটির সাথে তিনটি বিরাট নদী মিলে সবুজ করে রেখে ছিলো সাহারাকে। হ্রদ ও নদীকে ঘিরেই প্রান চঞ্চল ছিলো মানব সভ্যতা, জীব ও উদ্ভিদ।
তাহলে সেই সাহারার আজ কেনো এই পরিনতি? বিজ্ঞানীরা বলছেন সূর্য্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ বদলে যাওয়ায় আজ থেকে আট-দশ হাজার বছর আগে ঘটে এই পরিবর্তন। এর আগে পৃথিবীর অক্ষ ২৪.১ ডিগ্রি কোনে হেলে ছিলো। কিন্তু কোন মহাজাগতিক সংঘর্ষে পৃথিবীর কক্ষপথে পরিবর্তন আলে পৃথিবীর অক্ষ ২৩.৫ ডিগ্রি কোনে হেলে যায়। এতে বদলে যায় পৃথিবীর জলবায়ু। মাত্র কয়েকশ বছরের মধ্যে শুকিয়া যায় হ্রদ, তিনটি বিশাল নদী ও প্রচুর শাখা নদীসহ পুরু সবুজ সাহারা। শুধু নীল নদের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে মিশরীয় সভ্যতা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন