ঝিনাইদহ-৪ আসনে এমনি আনোয়ারুল আজিম আনারের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবরায়ীক পার্টনার আখতারুজ্জামান শাহিনের নাম। আর হত্যার দায়িত্ব্য দেয়া তারই আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমান উল্লাহ আমানকে। গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় ছিলো ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ঝিনাইদাহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। অবশেষে তার খুনের খবর নিশ্চিত করেছেন কলকাতা পুলিশ। উদ্ধার হয়নি তার মরদেহ, তবে কলকাতার নিউ টাইনের সানজিবা গার্ডেন আবাসনের বাসা থেকে উদ্ধার করা অয় রক্ত মাখা জামা কাপড়। সন্দেহ ভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের পর মেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গয়েন্দা সূত্র বলছে ব্যবরায়ীক দ্বন্দে হত্যার পরিকল্পনা করে আখতারুজ্জামান শাহিন যিনি আজিমের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়ীক পার্টনার।
যেভাবে কিলিং মিশনের নীল নকশা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়
গোয়েন্দা তথ্য মতে, গত ৩০ এপ্রিল আখতারুজ্জামান শাহিন, আমান উল্লাহ ও সিলিস্তা রহমান নামে নিজের এক বান্ধবিকে নিয়ে কলকাতায় যায়। যেখানে আগে থেকে ভাড়া করে রাখা নিউ টাউন এলাকার রানজিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্লাটে ওঠে তারা। কলকাতার তারও আগে থেকে অবস্থান করছিলো শাহিনের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমনি আজিম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পুরু দায়িত্ব্য আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে ফিরে আসেন শাহিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভারাটে কিলার ফয়সাল গাজী ও মোস্তাফিজ ১১ই মে কলকাতায় গিয়ে আমানের সাথে যোগ দেয়।
১২ মে দর্শনা সিমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। প্রথম দিন তিনি নিজের বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন আনারকে নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যাকারীরা। সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় এমপি আনারকে সানজিভা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় সেখানে তিনি ছারাও আরও জন ঢুকে ছিলেন। যাদের আবার প্রায় আড়ায় ঘন্টা পর বেড়িয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া ঐ ফ্ল্যাটে ঢোকার জন্য একটি গাড়ি কয়েকবার আসা যাওয়া করে।
গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, চাপাতির মুখে আনারকে জিম্মি করে আমান, সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ। এসময় তারা এমপির কাছে শাহিনের পাওয়া টাকা পরিশোধের কথাও বলে। বিষয়টি নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপি আনারকে গুম করতে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর কাছের শপিংমল থেকে আনা হয় ২টি বড় ট্রলি ব্যাগ ও পলিথিন। এমপি আনারের মরদেহের টুকরো গুলু পলিথিনে ভরে ট্রলিতে ঢোকানো হয়।
গোয়েন্দা তথ্যে দাবি করা হয় হত্যার পরদিন বিকালে একটি ট্রলি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় আমান। পাশের একটি শপিং মলের সামনে ট্রলিটি সিয়ামের হাতে তুলে দেয়। আগে থেকে ভাড়া করে রাখা গাড়ি নিয়ে সিয়ামসহ অজ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যায়। কিছু দূর যাওয়ার পর ব্যাগটি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে সিয়াম। আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তার দুই সহযোগী এমপি আনারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে দুই দিকে চলে যায়। সেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার পাশাপাশি বিভিন্ন নাম্বারে মেসেজ পাঠানো হয়। যাতে করে তদন্তকারী বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এমপি আনারের লোকেশন নিয়ে বিভ্রান্তিরতে পরে যায়। এরপর ১৫ই মে সিলিস্তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে আমান। পরে ১৭ই মে মোস্তাফিজ ও ১৮ মে ফয়সাল বাংলাদেশে ফিরে আসে।
৫কোটি টাকার কিলিং মিশন সম্পন্ন করার পর ঢাকায় বোনের বাসায় আত্মগোপন করে আমান। আমানের পুরু নাম আমানুল্লাহ সাইদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পড়াশোনা করছেন। আমানুল্লা পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা ছিলেন। ধারনা করা হচ্ছে আখতারুজ্জামান শাহিন এখন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন