প্রকৃতি থেকে খাদ্য নিয়ন্ত্রন করে খাওয়ার জন্য বিভিন্ন অঙ্গ ব্যবহার করে। যেমন মানুষ হাত, গরু মুখ, পাখি ঠোট, গিরগিটি জিহ্বা। তবে সাপের এমন বিশেষ কোন অঙ্গ নেই। সাপের শরীরে এমন কেমিক্যাল তৈরি হয়েছে যা শিকারির শরীরে প্রবেশ করলে শিকার মারা যায়। যাকে স্ন্যাক ভেনম বলা হয়। সাপের বিষে এমনসব প্রোটিন থাকে যা মূলত চার ভাবে মানুষকে মেরে ফেলতে পারে।
নিউরো-টক্সিন (Neutotoxin): যা মানুষের নার্ভাস সিস্টেম ও ব্রেইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিং কোব্রারর বিষে অতি মাত্রায় নিউরো-টক্সিন বিষ থাকে।
হেমো-টক্সিন (Hemotoxin): হেমো-টক্সিন রক্ত ক্ষরন বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে এবং সেই সাথে শরীরের অভ্যন্তরে রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শরীরের অভ্যন্তরে রক্ত ক্ষরন ঘটায়। ফলস্বরূপ আক্রান্ত প্রাণী রক্ত শূন্যতায় মারা যায়। যেমন: রাসেল'স ভাইপার
সাইটো-টক্সিন (Cytotoxin): যা শরীরের কোষকে আক্রান্ত করে। যার ফলে কোষ মারা যায়। এতে আক্রান্ত স্থান ফোসকার মত ফুলে যায়। এমন ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন: রেটল-স্ন্যাক
মাইয়ো-টক্সিন (Myotoxin): এটি মাংস পেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমন ক্ষেত্রে আক্রান্ত প্রাণী প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে।
এই চার ধরনের বিষের বাইরেও সাপের বিষে আরও বিভিন্ন ধরনের বিষ থাকতে পারে। কোন একটি বিষাক্ত সাপের উপরের ৪টি প্রোটিনের যেকোন একটি থাকবে বেপারটা মোটেও এমন নয়। একাধিকতো বটে বরং এই চারটি সহ আরও কিছু প্রোটিন থাকতে পারে। যার ফলে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা খুবই জটিল বিষয়। বিষধর সাপ কামড়ালে এর মূল ঔষধ হচ্ছে ঐ সাপের এন্টিভেনম। যা মূলত এক ধরনের এন্টিবডি।
আমাদের শরীরে যখন কোন জীবাণু প্রবেশ করে সেই জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য আমাদের শরীর নিজে থেকে এন্টিবডি তৈরি করে। যা শুধু মাত্র ঐ নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এখন কোন কারনে যদি আমাদের শরীর এন্টিবডি তৈরি করতে না পারে বা যথেষ্ট এন্টিবডি তৈরি করতে পারে সে ক্ষেত্রে বাইরে থেকে এন্টিবডি প্রয়োগ করতে হয়।
এখন মূল ফ্যাক্ট হচ্ছে শরীর তাৎক্ষণিকভাবে এন্টিবডি তৈরি করতে পারে না। শরীরে নতুন কোন জীবাণু প্রবেশ করলে প্রথমে শরীর সেটাকে চিহ্নিত করে। এরপর এন্টিবডি তৈরি করত্র শরীর কিছুটা সময় নেয়। কোন একটি নতুন জীবাণুর বিপরীতে শরীর যদি এন্টিবডি তৈরি করে ফেলতে পারে তবে পরিবর্তিতে ঐ জীবাণুটি ঐ মানুষকে আর আক্রান্ত করতে পারে না। এখন সাপে কামড়ালে কেনো বাহির থেকে এন্টিবডি প্রয়োগ করতে হয় সেটা বলা যাক।
সাপের কামড়ের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে বিষ ঢুকে সেই বিষ আমাদের শরীরের জন্য একেবারেই অপরিচিত। ফলে শরীর বিষের বিপরিতে এন্টিবডি তৈরি করতে অনেক সময় নেই। তবে এই সময়ের মধ্যে সাপে কাটা ব্যাক্তির অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। যার ফলে বাহির থেকে এন্টিবডি প্রয়োগের মাধ্যমে সাপে কাটা ব্যাক্তিকে সুস্থ করা হয়।
এখন বলা যাক কিভাবে এন্টিভেনম আবিষ্কৃত হয়েছে
১৮৯০ সালে ফ্রান্স বিজ্ঞানী এলবার্ট ক্যালমেট সর্ব প্রথম সাপের এন্টিভেনম আবিষ্কার করেন। তিনি প্রথমে খরগোশের শরীরে ০.০৩ মিলিগ্রাম কিং কোবরা সাপের বিষ অরয়ো গ করেন। এবং লক্ষ রাখেন এতে খরগোশের শরীরে কেমন প্রভাব পরছে। এবং প্রতি সপ্তাহে কিছু পরিমান বিষ বাড়িয়ে কোবরার বিষ প্রয়োগ করতে থাকেন। এভাবে ৮মাস পর খরগোশটি ৩৫ মিলিগ্রাম বিষ গ্রহন করতে সক্ষম হয়। এই ৩৫ মিলিগ্রাম বিষ একটা খরগোশকে মারার মারার জন্য শুধু যথেষ্টই না বরং খরগোশকে মারা জন্য কোবরার যতটুকু বিষ প্রয়োজন তার চেয়ে ১৫ গুন বেশি। এভাবে এন্টি-ভেনম আবিষ্কৃত হয়। এখান এন্টি-ভেনম তৈরি করার জন্য ঘোড়ার শরীর ব্যবহার করা হয়। কারন ঘোড়ার শরীর থেকে বেশী পরিমান রক্ত সংগ্রহ করা যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন